Saturday, April 19, 2025

কারাগারে যেভাবে সময় কাটাতেন আল্লামা সাঈদী, জানালেন ছেলে

আরও পড়ুন

কারাগারে থাকাকালীন সময় কীভাবে অতিবাহিত করতেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, তা নিয়ে তাঁর ছেলে মাসুদ সাঈদী এক হৃদয়ছোঁয়া সাক্ষাৎকারে বিশদভাবে স্মৃতিচারণ করেন। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে একজন ধর্মপ্রাণ পিতার ঈমানি চেতনা, সময় ব্যবস্থাপনা ও দাওয়াতি জীবনের অসাধারণ দৃষ্টান্ত।

সম্প্রতি এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তাঁর সন্তান মাসুদ সাঈদী তুলে ধরেছেন কারাবন্দি জীবনে পিতার প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে অর্থবহ করে তোলা হতো।

সময়কে অপচয় নয়, সদ্ব্যবহার করতেন সাঈদী। “আমার সম্মানিত পিতা আল্লামা সাঈদী (রাহিমাহুল্লাহ), তিনি সময় নষ্ট করতেন না,”-সাক্ষাৎকারে বলেন মাসুদ।
“কোরবানির সময় যখন আসত, আব্বা নিজ হাতে পশু জবাই করতেন। এরপর গোশত কাটার সময় পাশে বসে থেকে কেবল দেখতেন না, বরং কোরবানির ফজিলত, উদ্দেশ্য, ইসলামে এর গুরুত্ব.এসব বিষয় কসাইদেরও বোঝাতেন। তাঁর কথা বলার ধরন এত প্রাণবন্ত ছিল যে, সাধারণ একজন কসাইও মুগ্ধ হয়ে শুনতেন।”

তিনি বলেন, “আব্বা চাইলে বিশ্রাম নিতে পারতেন, ঘুমিয়ে থাকতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি দাওয়াতি কাজে সময় ব্যয় করতেন। এটা তাঁর অভ্যাস ছিল, এক ধরণের আত্মিক কর্তব্যবোধ। তিনি কখনো অলস বসে সময় কাটাননি।”

আরও পড়ুনঃ  বিডিআর বিদ্রোহের দিন কী ঘটেছিল জানালেন সাবেক সেনাপ্রধান মইন

২০১৩ সালে এক কারা স্থানান্তরের স্মৃতি টেনে মাসুদ বলেন,“আব্বাকে যখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়, আমি পেছনে পেছনে গাড়ি ফলো করি। কারাগারে পৌঁছানোর পর আব্বা ১০-১৫ মিনিট একটি কক্ষে অপেক্ষমাণ ছিলেন। এ সময় তিনি কারারক্ষীদের সামনে সূরা আসর তেলাওয়াত করেন এবং তার তাফসীর বুঝিয়ে দেন। কারারক্ষীরাও নিবিষ্ট মনে তা শুনছিলেন।”

প্রশ্ন জাগে.এই মানুষটি যদি মুক্ত থাকতেন,মাসুদ সাঈদী বলেন, “আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, আহা! যদি এই মানুষটিকে ১৩ বছর কারাবন্দি না করে দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো ১৩ জন মানুষ ইসলাম গ্রহণ করত, ১৩ জন নামাজি হতো, ১৩ জন দ্বীনের পথে ফিরে আসত। কিন্তু তাঁকে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বন্দি রাখা হয়।”

আরও পড়ুনঃ  শেখ হাসিনার ‘গোপন কারাগারের’ কথা জানালেন ব্যারিস্টার আরমান

“শুরুর দিকে মাসে চারবার সাক্ষাৎ হতো। পরে তা দুইবার, এরপর একবারে নামিয়ে আনা হয়,”-বলেন মাসুদ সাঈদী।

“মাত্র ৩০ মিনিটের সময়ও আব্বা তিন ভাগে ভাগ করতেন-প্রথম ভাগে মায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত কথা, দ্বিতীয় ভাগে সন্তানেরা ও পরিবারের খোঁজখবর, আর শেষ ভাগে থাকত দাওয়াতি উপদেশ, কোরআন-হাদিসের আলোকে নসিহত। এই সময়টুকুই হতো আমাদের আত্মিক প্রশিক্ষণের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত।”

“আব্বা কখনো আমাদের বলেননি তাঁর মুক্তির জন্য কোথাও তদবির করতে। বরং তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ যেহেতু আমাকে ঈমানের পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেছেন, তাই তোমরা আমার জন্য দোয়া করো যেন উত্তীর্ণ হতে পারি।’ যখন আমরা হতাশ হয়ে পড়তাম, তিনি আমাদের কোরআনের আয়াত শুনিয়ে বলতেন, ‘হতাশ হয়ো না, ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদেরই হবে যদি আমরা মুমিন হই।’”

আরও পড়ুনঃ  ফরিদপুরে ২ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, আহত ৫

২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে আল্লামা সাঈদী ছিলেন প্রায় দুই বছর গৃহবন্দি। সে সময়কার স্মৃতি উল্লেখ করে মাসুদ বলেন,“এটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আব্বা দিনভর বাসায় থাকতেন, শুধু নামাজে যেতেন মসজিদে। রাত নয়টার মধ্যে খাবার খেয়ে নিতেন, এরপর বাসার ছাদে হাঁটতেন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। এই হাঁটার সময়টুকু ছিল আমার জন্য দারুণ শিক্ষার সুযোগ-আব্বা ছাত্রজীবন, দাওয়াতি অভিজ্ঞতা, পারিবারিক গল্প-সব শেয়ার করতেন।”

“প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে আব্বার পড়ার রুমে গিয়ে সালাম দিতাম। আব্বা তখনও বই পড়তেন। ফজর থেকে সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত নিরবিচারে পড়তেন। তারপর দেখা করতেন আগতদের সঙ্গে। রাতেও পড়াশোনা করতেন। আব্বা প্রচুর পড়তেন, প্রতিটি দিনকে কাজে লাগাতেন। যাওয়ার আগে তিনি আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করতেন-এই মুহূর্তগুলো আজও গভীরভাবে মনে পড়ে,”-বলেন মাসুদ সাঈদী।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সম্পর্কিত খবর

বসতবাড়িতে যৌন ব্যবসা, ক্ষোভে আগুন দিলো স্থানীয়রা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ বসতবাড়িতে যৌন ব্যবসা, ক্ষোভে আগুন দিলো স্থানীয়রা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আলমপুরে কয়েকটি বসতবাড়িতে অনৈতিক কাজের অভিযোগে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ...

আগামীতে তারেক রহমানই দেশের দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার করবেন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু বলেছেন, অনেক আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে...

সর্বশেষ সংবাদ